05 । বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা । Compulsory primary education ।। প্রবন্ধ-রচনা ।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা।

ভূমিকা : শিক্ষাই উন্নতির চাবিকাঠি। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। আমাদের দেশের শতকরা প্রায় ৬২ ভাগ লোক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। দেশের এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন মোটেই সম্ভব নয়। তাই সরকার ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছেন।

প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা : আমাদের দেশে ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু এ শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণ না ঘটায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে মাত্র এক কোটি শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। বাকিরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে পারলে এ অবশিষ্ট শিশুরাও শিক্ষার আলোকে আলোকিত হবে।

05 । বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা । Compulsory primary education ।। প্রবন্ধ-রচনা ।
Compulsory primary education.

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য : দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়াই বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চয়তা বিধান বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তনের লক্ষ্য। শিশুর দৈহিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক বিকাশ এবং ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন এ শিক্ষার উদ্দেশ্য। মানুষের প্রতি মানুষের ভালবাসা, দেশের প্রতি মমত্ববোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, শ্রমের মর্যাদা এবং বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা যে কতটুকু তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, আমাদের দেশে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন লোকের সংখ্যা মাত্র ৫৮%। রাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক লোক যেখানে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত সেখানে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা বিশেষভাবে অপরিহার্য। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশের নাম উল্লেখ করা যায়।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার অন্তরায় : আমাদের দেশের মত দরিদ্র দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করা অত্যন্ত কঠিন এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার। এ শিক্ষার সমস্ত কর্মকাণ্ডের আর্থিক যোগান সরকার দিতে না পারলে কোন ক্রমেই এ কার্যক্রম সফল হবে না। পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবেও এ শিক্ষা ব্যাহত হতে পারে। গতানুগতিক শিক্ষা, দরিদ্রতা, অল্পবয়সী শিশুকে পেশায় নিয়োগ প্রবণতা, জনসাধারণের নিরক্ষরতা এবং কুসংস্কার এ শিক্ষার অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সফলের উপায় : বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা সফল করতে হলে অধিক সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। শিশুদের বিদ্যালয়ে আসার জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করতে হবে। উপযুক্ত অধিক সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করতে হবে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে অভিভাবকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষার উপযোগী উপকরণ বিতরণ করতে হবে। শিক্ষাদানে নিয়োজিত কর্মীদেরকেও আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে হবে। সর্বোপরি, সরকার এবং শিক্ষিত জনগণ সমতালে এগিয়ে আসলে এ শিক্ষা সহজেই সফল হবে।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষায় গৃহীত কর্মসূচি : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছেন। সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য কতিপয় উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নবনির্মিত সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অনুমোদন দান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭০ ভাগ শিক্ষিকা নিয়োগ অন্যতম। এছাড়াও বিনামূল্যে ছাত্র ছাত্রীদেরকে বই দেয়া, বিনামূল্যে পোশাক সরবরাহ এবং গরিব ছাত্রদের জন্য শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাকে কার্যকর করার জন্য জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সরকার দেশের এন.জি.ও গুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।

উপসংহার : যে কোন দেশে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে প্রাথমিক শিক্ষায়। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যকর হলে দেশ দারিদ্র্য, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা এবং ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক মূল্যবোধ থেকে মুক্তি পেয়ে অচিরেই উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হবে। তাই আমাদের দেশের মত দরিদ্র দেশের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post