নিরক্ষরতা দূরীকরণ।
অথবা, সাক্ষরতা আন্দোলন।
ভূমিকা : নিরক্ষরতা একটি জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ। নিরক্ষর জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারে না। তাই দেশ ও জাতির উন্নতিকল্পে নিরক্ষরতা দূরীকরণ অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি অন্যতম দরিদ্র দেশ। এখানে নিরক্ষরতা একটা উল্লেখযোগ্য সমস্যা। এ সমস্যার আশু সমাধান করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
অক্ষরের প্রয়োজনীয়তা : পৃথিবীর সকল ভাষারই অক্ষর রয়েছে। অক্ষরের সাহায্যেই মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র কথাবার্তা ও তত্ত্ব-তথ্য বইতে সাজিয়ে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডারকে করেছে পরিপূর্ণ। অক্ষর ছাড়া কোন পুস্তক লেখা বা পাঠ করা সম্ভব নয়। অক্ষর না হলে মানব সভ্যতার অতীত ইতিহাস আজকের মানুষ জানতে পারত না। আর তাই বলা যায়, মানব সভ্যতার বিকাশে অক্ষরের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
Elimination of illiteracy or, literacy movement. |
নিরক্ষরতার অভিশাপ : কোন জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে শিক্ষা। নিরক্ষরতার অভিশাপ জাতিকে নিয়ে যায় অন্ধকারের অতল গহবরে। নিরক্ষর লোকেরা নিজের উন্নতি ও জাতীয় উন্নতি কোনটিতেই ভূমিকা রাখতে পারে না। তারা দেশ ও জাতির বোঝাস্বরূপ। আমাদের বাংলাদেশও নিরক্ষরতার অভিশাপে অভিশপ্ত। কোন দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষর রেখে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। আর তাই নিরক্ষর লোকদেরকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করে তোলার জন্য আমাদের গ্রহণ করা দরকার বাস্তব পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা : নিরক্ষরতার ভয়াবহতা বিবেচনা করে এবং অতীতের প্রচেষ্টার অপ্রতুলতা লক্ষ্য করে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০০ সাল নাগাদ সবার জন্য শিক্ষার যে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন এবং এ শিক্ষায় আগ্রহ সৃষ্টির জন্য ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চালু করেছেন। এতে আশাব্যঞ্জক সাড়া পড়েছে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী অনেকগুণ বেড়েছে। এতদ্ব্যতীত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক (Free) করা হয়েছে এবং মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণী পর্যন্ত বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া দেশে অনেকগুলো বেসরকারী সংস্থা বা এন. জি. ও.-এর মাধ্যমে সাক্ষরতা কার্যক্রম বাস্তবায়িত করছে।
গণশিক্ষা কেন্দ্র : গণশিক্ষার মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষিত লোকদের সহায়তায় গণশিক্ষা কেন্দ্ৰ খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের পরিচালকগণ ইচ্ছে করলে নিরক্ষরতা দূরীকরণে সফল ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ ‘নৈশ বিদ্যালয়’ হিসেবে ব্যবহার করে নিরক্ষরতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ও শিক্ষকবৃন্দ এগিয়ে আসলে এ ব্যাপারে অনেকাংশে সফলকাম হওয়া সম্ভব। 'Each one teach me' এ শ্লোগানটিকে একটি সামাজিক শ্লোগানে পরিণত করে নিরক্ষরতা দূরীকরণে সম্যক ভূমিকা পালন করা যায়।
বেসরকারী উদ্যোগ : নিরক্ষরতা দূরীকরণে বেসরকারি পর্যায়ে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বেসরকারি পর্যায়ে ছাত্র/শিক্ষকগণ নিরক্ষরতা দূরীকরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা বয়স্ক ব্যক্তিদের শিক্ষাদানের জন্য গ্রামে নৈশ বিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারে। নিরক্ষর লোকদের অক্ষর দান একটি অতীব মহৎ কাজ। এ ব্যাপারে ছাত্র/শিক্ষক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, এবং এন.জি.ও. শিক্ষিত ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা কঠিন কিছু নয়।
উপসংহার : নিরক্ষরতা আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্থহীন হতে বাধ্য। তাই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে নিরক্ষরতা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলে এগিয়ে আসলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জাতিকে নিরক্ষরতার বিষবাষ্প থেকে মুক্ত করা সম্ভব।