আল্লাহ তাঁর ক্ষমা, জান্নাত এবং জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা পাওয়াকে ধৈর্য ধারণ করার সাথে যুক্ত করেছেন। আমি আবারো বলছি, আল্লাহ তাঁর ক্ষমাকে ধৈর্যের সাথে যুক্ত করেছেন। আল্লাহ কুরআনে বলেন- اِلَّا الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃٌ وَّ اَجۡرٌ کَبِیۡرٌ - "তবে যারা সবর করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও মহা প্রতিদান।" (১১:১১) তাহলে আল্লাহর ক্ষমা ধৈর্যের সাথে সম্বন্ধযুক্ত।
জান্নাতে প্রবেশ এবং জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা পাওয়াকেও ধৈর্য ধারণের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ কুরআনে বলেন, جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَهَا وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِهِمۡ وَ اَزۡوَاجِهِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِهِمۡ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَدۡخُلُوۡنَ عَلَیۡهِمۡ مِّنۡ کُلِّ بَابٍ ﴿ۚ۲۳ - "স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যাতে তারা এবং তাদের পিতৃপুরুষগণ, তাদের স্ত্রীগণ ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ছিল তারা প্রবেশ করবে। আর ফেরেশতারা প্রতিটি দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করবে।" سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ بِمَا صَبَرۡتُمۡ فَنِعۡمَ عُقۡبَی الدَّارِ - (আর বলবে) ‘‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম"। (১৩:২৩-২৪)
কল্পনা করুন, আপনি জান্নাতে আছেন। জান্নাতের আসন সমূহে হেলান দিয়ে শুয়ে জান্নাতের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আর ফেরেশতারা দলে দলে এসে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। তখন তাঁরা কী বলে অভিনন্দন জানাচ্ছেন? "সালামুন আলাইকুম বিমা সবারতুম- তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে।"
তাহলে দেখা যাচ্ছে, ফেরেশতারা জান্নাতে আপনার অবস্থান এবং মর্যাদাকে এই দুনিয়ায় আপনি যে ধৈর্য দেখিয়েছেন তার সাথে যুক্ত করেছেন।
আর জান্নাতের যে কোনো জায়গা নয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সর্বোচ্চ ধাপের জান্নাতের কথা ধৈর্য ধারণের সাথে যুক্ত করেছেন। আল্লাহ বলেন- اُولٰٓئِکَ یُجۡزَوۡنَ الۡغُرۡفَۃَ بِمَا صَبَرُوۡا - "এদেরকেই তাদের ধৈর্যধারণের কারণে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান দান করে পুরস্কৃত করা হবে।" (২৫:৭৫)
তাহলে ধৈর্য আপনাকে জান্নাতের সুউচ্চ লেভেল পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবে।
এমনকি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্বয়ং আপনাকে অভিনন্দন জানাবেন আপনি যে ধৈর্য প্রদর্শন করেছেন তার জন্য। আক্ষরিক অর্থেই কুরআনে এসেছে- اِنِّیۡ جَزَیۡتُهُمُ الۡیَوۡمَ بِمَا صَبَرُوۡۤا ۙ اَنَّهُمۡ هُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ - "আজ আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে, আজ তারাই তো সফলকাম।" (২৩:১১১)
এখানে আল্লাহ ফাস্ট পার্সনে কথা বলছেন। তিনি সাধারণত এভাবে কুরআনে কথা বলেন না। আল্লাহ সাধারণত থার্ড পার্সনে কথা বলেন। "আমরা করব বা তাদের প্রতি আশীর্বাদ করা হবে..." কিন্তু এই আয়াতে তিনি ফাস্ট পার্সনে কথা বলছেন। তিনি আমাদের সরাসরি সম্বোধন করে বলছেন- "ইন্নি জাজাইতুহুমুল ইয়াওমা বিমা সবারু- নিশ্চয় আমি তাদের ধৈর্যের কারণে আজ তাদেরকে পুরস্কৃত করলাম।"
তাহলে আল্লাহ নিজে ধৈর্যশীলদের পুরস্কৃত করবেন। তারপর আল্লাহ বলেন, আন্নাহুম হুমুল ফা-ইজুন- এরাই হলো তারা যারা জিতে গেছে।
কুরআনে জান্নাত জিতার একটা রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করার একটা রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। কারা সত্যিকারের জয় লাভ করেছে? আল্লাহ বলেন- আন্নাহুম হুমুল ফা-ইজুন- এরাই হলো তারা যারা জিতে গেছে।"
ধৈর্য ধরার মানে কি?
১। 'ই'রাদ।' কুরআনে এই বিষয়ে বার বার আলোচনা করা হয়েছে। 'ই'রাদ' অর্থ উপেক্ষা করা, মুখ ফিরিয়ে নেয়া, এড়িয়ে চলা। যখনি আপনি এমন কিছু দেখেন যা আপনাকে ডিস্টার্ব করছে বা মর্মাহত করছে, সেটা উপেক্ষা করুন।
২। লক্ষ্য পানে অটুট থাকা, পিছু না হটা, সন্দেহে পতিত না হওয়া এবং নিজ বিশ্বাসে অটুট থাকা। সবর বলতে বুঝায় আপনি বিভ্রান্ত হন না। অধ্যবসায় বা আরবিতে দাওয়াম ইঙ্গিত করে যে আপনি বিভ্রান্ত হন না। আপনার একটি লক্ষ্য আছে, উদ্দেশ্য আছে, আপনাকে আপনার সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। যাত্রাপথে বিভিন্ন জিনিস আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে, বিভ্রান্ত হবেন না; আপনার লক্ষ্য পানে অটুট থাকুন।
৩। ধৈর্য মানে কোনো কিছু না করা, নিষ্ক্রিয়তা। কোন ক্ষেত্রে? যখন কোনো কিছুতে বিরক্ত হয়ে পড়েন, রেগে যান, কষ্ট পান, শোকাহত হয়ে পড়েন তখন মনে হয় কিছু একটা করা দরকার। ধৈর্য মানে সে সময় নিজেকে দমন করা, আটকিয়ে দেওয়া এমন কিছু করা থেকে যা আল্লাহ পছন্দ করেন না। ধৈর্য মানে— কোনো কারণে ভেতরে ভেতরে আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আপনি তা বাহিরে প্রকাশ হতে দিচ্ছেন না। শোক, রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, যেটাই হউক না কেন আপনি তা গিলে ফেলেছেন, বাহিরে প্রকাশ হতে দিচ্ছেন না।
৪। পাপ করা থেকে এবং আল্লাহর অবাধ্য হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
৫। সময় নষ্ট করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। উপকারী কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং আল্লাহর ইবাদাতে নিজেকে আটকিয়ে রাখা। আর এটা সর্বোচ্চ লেভেলের ধৈর্য। অতিরিক্ত বেহুদা কাজে, সময় নষ্ট হওয়ার কাজে যুক্ত হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এবং নিজের জন্য বেশি উপকারী কাজে যুক্ত থাকা। যেমন—বেশি বেশি কুরআন অধ্যয়ন করা, মুখস্ত করা, নামাজে সেগুলো তিলাওয়াত করা, অতিরিক্ত জিকির করা, অতিরিক্ত দান করা।