উদ্দীপকের বিষয় : পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ।
কৃষ্ণপুর গ্রামের জমিরউদ্দিন একজন অতি সাধারণ মানুষ। দোতারা হাতে গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়ায়। সবাই মুগ্ধ হয়ে তার গান শােনে। এসব গানে কত প্রেম, কত সৌন্দর্য আর কত তত্ত্বজ্ঞান ওতপ্রােতিভাবে জড়িয়ে আছে। এগুলাে আমাদের অমূল্য রত্নবিশেষ হলেও তা আজ বিলপ্তির পথে। পল্লিসাহিত্যের এসব উপাদান সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব আমাদের সকলের।
ক. পল্লিসাহিত্য কী জাতীয় রচনা?
খ. Folklore Society-এর কাজ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের কোন দিকটির প্রতি ইঞ্গিত করা হয়েছে?
ঘ. "উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের মূল কথাকে প্রতিকায়িত করতে সক্ষম হয়েছে।" - উক্তিটির যথার্থতা
বিচার কর।
খ. অনুধাবন
Folklore Society এমন একটি সমিতি যেটি লােকশিল্প ও লােকসংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করে।
ইউরােপ-আমেরিকার মতাে এদেশেও এ ধরনের সমিতির প্রয়ােজন রয়েছে। Folklore Society-র কাজ হলাে বিভিন্ন প্রকার লােকশিল্প, গান, উৎসব, অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার উপাদান সংগ্রহ করা এবং প্রচারের জন্য কাজ করা। এ সমিতি লোেকসাহিত্য সংরক্ষণ ও গবেষণার কাজে নিয়ােজিত থাকে। ১৮৪৮ সালে সর্বপ্রথম লন্ডনে Folklore Society গঠিত হয়।
সারকথা : Folklore Society-র কাজ হল লােকশিল্প বা লােকসাহিত্য এবং লােকসংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা, গবেষণা করা এবং তা প্রচারের জন্য কাজ করা।
গ. প্রয়ােগ
উদ্দীপকটি 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধে উল্লিখিত এদেশের অমূল্য সম্পদ পল্লিগানের প্রতি ইঞ্গিত করা হয়েছে।
পল্লিগান বাংলা পল্লিসাহিত্যের অবিচ্ছদ্য অংশ। বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন-যাতনা জড়িয়ে থাকে এ গানের পরতে পরতে। এ গান আমাদের ঐতিহ্য।
উদ্দীপকে কৃষ্ণপুর গ্রামের অতি সাধারণ মানুষ জমিরউদ্দিনের কথা বলা হয়েছে। সে দোতারা হাতে গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়ায়। তার গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়। এসব গানে অনেক প্রেম, অনেক সৌন্দর্য ও অনেক তত্ত্বজ্ঞান ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে। উদ্দীপকের মতাে পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধও লেখক এদেশের অমূল্য রত্নবিশেষ পল্লিগানের কথা বলেছেন। আলােচ্য প্রবন্ধ ডষ্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলার পল্লিগানের সঙ্গে সঙ্গে পল্লিসাহিত্যের আরও বিশেষ কয়েকটি দিক সম্পর্কে আলােচনা করেছেন।
এদেশের ঐশ্বর্যশালী পল্লিগানগুলােকে তিনি অমূল্য রত্নবিশেষ বলে মনে করেন। তিনি দেখেছেন যে জারি গান, ভাটিয়ালি গান, রাখালি গান, মারফতি গান এমন অফুরন্ত সমৃদ্ধিশালী গানের ভাণ্ডার পল্লির মাঠে-ঘাটে ছড়ানাে রয়েছে। তাতে কত প্রম, কত আনন্দ, কত সৌন্দর্য ও কত তত্ত্বজ্ঞান জড়িয়ে আছে। উদ্দীপক ও প্রবন্ধ উভয় ক্ষেত্রেই পল্লিগানের কথা প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকে পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধে উল্লিখিত অমূল্য সম্পদ পল্লিগানের প্রতি ইঞ্গিত করা হয়েছে।
সারকথা : উদ্দীপকে 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধে উল্লিখিত এদেশের পল্লিসাহিত্যের অমূল্য রত্ন পল্লিগানের সৌন্দর্যের দিকটির প্রতি ইঞ্গিত করা হয়েছে। উদ্দীপকের জমিরউদ্দিন সেই অমূল্য গানের মরমি স্রষ্টা। তার গানের প্রেমে, সৌন্দর্যে, তত্ত্বজ্ঞানে সবাই যেমন মুগধ তেমন আবেগাপ্লুত।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি 'পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের মূলকথাকে প্রতিকায়িত করতে হয়েছে।"- মন্তব্যটি যথার্থ।
পল্লিসাহিত্য বাংলা সাহিত্যের প্রাণ। আমাদের অবহেলায় এ সাহিত্য আজ বিলুপ্তির পথে। তাই আমাদের সবার উচিত বিলুপ্তি পল্লিসাহিত্যকে রক্ষা করা।
উদ্দীপকের জমিরউদ্দিন একজন মরমি শিল্পী। দোতারা হাতে গ্রামে গ্রাম গান গেয়ে বেড়ায় সে। সবাই তার গান শুনে মুগ্ধ হয়। এসব গানে কত প্রেম, কত সৌন্দর্য, কত তত্ত্বজ্ঞান জড়িয়ে থাকে। এগুলাে আমাদের অমূল্য রত্নস্বরূপ, কিন্তু এগুলাে আজ বিলুপ্তির পথে। এসব পল্লিসাহিত্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্বটি আমাদের সবার গ্রহণ করতে হবে।
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তাঁর পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধে সে কথাই বলেছেন। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের লােকসংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য পল্লিসাহিত্যের বিচিত্র সম্পদ বিশেষ যত্নের সঙ্গে আহরণ করা জরুরি। এগুলাে রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব সবার।
আমাদের পল্লিসাহিত্য বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। অথচ এগুলাে অতি উৎকৃষ্টমানের অমূল্য রত্ন। এগুলাে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সবার এগিয়ে আসা উচিত, কেননা এগুলাে সবার সম্পত্তি। উদ্দীপক এবং 'পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের মূল কথা এটাই। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
সারকথা : আমাদের ঐশ্বর্যময় পল্লিসাহিত্য আজ বিলুপ্তির পথে। এগুলাে আমাদের সবার সম্পত্তি। তাই সবার উচিত এগুলাে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা।