পল্লির জীবনাচরণ সম্পর্কে শহুরে মানুষের অজ্ঞতা ।

উদ্দীপকের বিষয় : পল্লির জীবনাচরণ সম্পর্কে শহুরে মানুষের অজ্ঞতা।

মিরাজ জন্ম থেকেই ঢাকার বাসিন্দা। এখন তার বয়স বারাে বছর। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র। দু'বছর বয়স থেকেই ইংরেজি মিডিয়ামে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পড়ালেখায় সে বেশ মেধাবী। বাবা-মা ঢাকা থাকার কারণে গ্রামে যাওয়ার তার বিশেষ দরকার পড়েনি। কিন্তু গত দু'দিন আগে সে তার বড় চাচার সাথে শখ করে গ্রামে এসেছে। গ্রামে এসে সে আনন্দ যা পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হতবাক হয়েছে। গ্রামের খেলাধুলা, মানুষের জীবনাচার, গ্রাম্য মানুষের অবসর যাপন সবকিছুই তাকে মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে তার এক দাদির মুখে রূপকথার গল্প শুনে সে অভিভূত। এসব সে কখনাে শােনেনি। সব সময় ইংরেজি পড়েই কাটিয়েছে। তার ইচ্ছে হলাে গ্রামে থেকে যাবে। কিন্তু উপায় নেই, দু'দিন বাদেই তার ইংরেজি স্কুল খুলবে।


07 । পল্লির জীবনাচরণ সম্পর্কে শহুরে মানুষের অজ্ঞতা ।
পল্লির জীবনাচরণ সম্পর্কে শহুরে মানুষের অজ্ঞতা ।


ক. "তাঁরা পল্লির মর্মকথা কী করে জানবেন?"- কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে?
খ. শহুরে গানের প্রভাবে সেগুলাে এখন বর্বর চাষার গান বলে ভদ্র সমাজে বিকায় না।"- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ঘ. "উদ্দীপকটি পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের একটি সত্যকে প্রকাশ করে।"- মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ কর।

ক. জ্ঞান
"তাঁরা পল্লির মর্মকথা কী করে জানবেন?"- শহরের মানুষকে উদ্দেশ্য করে একথা বলা হয়েছে।


খ. অনুধাবন
প্রশ্নোত্ত বাক্যটি দ্বারা যা বােঝানাে হয়েছে তা হলাে, আধুনিক সভ্যতায় গান যে নতুন সংজ্ঞা ও কাঠামাে লাভ করেছে, সে সংজ্ঞা ও কাঠামাের কারণে পল্লির গান শহুরেদের কাছে বর্বর চাষার, গান হিসেবে বিবেচিত।

পল্লির গান সাধারণত প্রাঞ্জল ভাষায় পল্লির সহজ-সরল মানষের জীবনের সখ ও দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করে, আশা-হতাশার কথা ব্যক্ত করে। নাগারক সভ্যতায় গান মানেই উদ্ভট কথা আর যান্ত্রিক আড়ম্বর। অথচ গ্রামের সাবলীল গানে বাদ্যযন্ত্রের দূষণীয় কোলাইল নেই। এ কারণেই শহুরে লােকদের কাছে গ্রামের গান চাষার গান হিসেবে বিবেচিত হয়।


সারকথা : গ্রামের গান মানেই সাবলীল জীবনের কথা। শহরের গান মানেই শব্দজট ও বাদ্যযন্ত্রের বিকট কোলাহল। এর ফলে পাল্লগান শহুরেদের কাছে বর্বর চাষার গান বলে বিবেচিত হয়।

গ. প্রয়ােগ
উদ্দীপকে 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের পল্লির জীবনাচার সম্পর্কে শহরে মানুষদের অজ্ঞতার কথা ফুটে উঠেছে।

বর্তমানে নাগরিক সভ্যতার প্রভাবে মানুষ পল্লি থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে পল্লিবাংলার জীবনাচরণও মানুষের কাছে অজানা। অজানা পল্লিসাহিত্যের সমৃদ্ধ দিকটিও।


মিরাজ ঢাকার বারসিন্দা। আগে কখনই সে গ্রামে আসেনি। সে শহরের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করে। ফলে বাংলা সাহিত্য তার অজানা, পল্লিসাহিত্য আরও বেশি অজানা। সে তার বড় চাচার সঙ্গে গ্রামে আসে। গ্রাম্য জীবনাচার দেখে সে অবাক হয়। দাদির কাছে খূপকথার গল্প শুনে সে চমৎকৃত হয়। কারণ এর আগে তার এসব জানার সুযােগ হয়নি। পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধেও শিক্ষার কর্মনাশা স্রোেত ও নাগরিক সভ্যতার নিগড়ে বন্দি থাকার কথা বলা হয়েছে। শহরের লােকেরা নব্য আধুনিক সভ্যতায় শিক্ষিত হওয়ার কারণে গ্রামের সহজ-সরল জীবনকে ঘৃণা করতে থাকে। ফলে গ্রামবিমুখ হওয়ায় তারা গ্রাম সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না। তাই বলা যায় যে, 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের পল্লির জীবনাচার সম্পর্কে শহরে মানুষদের অজ্ঞতার কথা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।


সারকথা : 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধে শহরের মানুষের কাছে গ্রাম কীভাবে অবজ্ঞা আর অবহেলার স্থান তা তুলে ধরেছেন। এর বাস্তব উদাহরণ রয়েছে উদ্দীপকের মিরাজের চরিত্র। কারণ শহরে থাকার কারণে হঠাৎ করে গ্রাম্য জীবন ও রীতি দেখে সে চমকে গেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
উদ্দীপকটি, 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের একটি সত্যকে প্রকাশ করে।"- মন্তব্যটি সত্য।

যান্ত্রিক এ সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মানুষ বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করছে। পল্লির সংস্পর্শ থেকে মানুষ দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। শহুরে মানুষদের কাছে পল্লির লােকাচার আরও বেশি অজানা থেকে যাচ্ছে।


উদ্দীপকের মিরাজের জন্ম ঢাকা শহরে। বাবা-মা শহরে থাকার কারণে তার গ্রামে আসার বিশেষ প্রয়াজন পড়েনি। ফলে গ্রামের মানুষের সহজ-সরল জীবনযাপন দেখে সে অবাক হয়। গ্রাম্য খেলাধুলা, গ্রামের মানুষের আড্ডা সবকিছুই তার কাছে নতুন। গ্রাম্য বূপকথা তার কাছে আরও আশ্চর্য মনে হলাে। মূলত মিরাজের এ অজানার জন্য শহরের যান্ত্রিকতা ও শিক্ষার কর্মনাশা স্রােতই দায়ী। পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধেও লেখক শহরের মানুষ আর গ্রাম্য মানুষের মাঝে পার্থক্য দেখিয়েছেন। শহরের মানুষের কাছে পল্লিজীবন একেবারেই অজানা। কারও কল্পনায় গ্রাম অনেক দুঃসহ আর বসবাসের অযােগ্য। আবার কারও কাছে গ্রাম রূপকথার মতাে। গ্রামের প্রতি শহরে মানুষের এই অজ্ঞতার অন্যতম কারণ হলাে পল্লিসাহিত্যের প্রতি উদাসীনতা ও অবহেলা।


শহরের মানুষ যদি পল্লিসাহিত্যের সংস্পর্শ পেত, তবে এমনটি হতাে না। এই দূরত্ব মােচনের জন্য প্রয়ােজন নাগরিক সাহিত্যের পাশাপাশি পল্লিসাহিত্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মূল্যায়ন। সরস প্রাণের রচিত এই সাহিত্য পাঠেই মানুষ শহর ও গ্রামের মধ্যকার পার্থক্য ঘুচাতে পারবে। এই সত্যটি উদ্দীপক ও পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধে প্রকাশ পেয়েছে। এ দিক থেকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : পল্লিসাহিত্যের অবমূল্যায়নের কারণে শহর ও গ্রামের মানুষের মাঝে বিরাট পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে- 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের এ ভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় উদ্দীপকের মিরাজের চরিত্রে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post