বাংলা পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে ।

উদ্দীপকের বিষয় : পল্লিসাহিত্যের প্রতি মমত্ববােধ।

আমি ছােট চাকরি করি। মাঠ পর্যায়ে আমার কাজ। ফলে নানান জাতের মানুষের সাথে পরিচয় হয়। সেদিন কাজ করছিলাম নোেয়াখালির চাটখিল উপজেলার পরানপুর গ্রামে। তখন দুপুর। ক্লান্তি বােধ করায় কাছাকাছি একটা চায়ের দোকানে বসলাম। দেখলাম একজন লােক শুধু ছন্দোবদ্ধ কথা বলছেন। বেশভূষায় মনে হলাে শ্রমিক। তন্ময় হয়ে তাঁর কথা শুনলাম। মুহূর্তেই সাবলীল ছন্দ তৈরি করে ফেলছেন। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম- ইনি খুবই গরিব কৃষক। কিন্তু অজস্র গান, ছন্দ, ছড়া, আর পুঁথি মুখস্থ আছে তাঁর। আর ছন্দোবদ্ধ কথা বলায় দশ গ্রামের মধ্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। মনে মনে শ্রদ্ধা জাগল লােকটির প্রতি। ভাবলাম, পল্লির মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে থাকা এসব দুর্লভ সাহিত্য যদি সংগ্রহ করা যায় তবে বাংলা সাহিত্য আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।


06 । বাংলা পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে ।
বাংলা পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে ।


ক. ছেলেমেয়েরা বাধা গৎ কোথায় ব্যবহার করে?
খ. "আজ দুঃখে দৈন্যে প্রাণে সুখ নেই।" কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের সঙ্গে উদ্দীপকের কথকের সাদৃশ্য কোথায়?
ঘ. "উদ্দীপকে 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের সমগ্র ভাবের প্রকাশ না ঘটলেও আংশিক ভাব প্রকাশ পেয়েছে।"- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। 

ক. জ্ঞান
ছেলেমেয়েরা বাঁধা গৎ খেলাধুলায় ব্যবহার করে।


খ. অনুধাবন
"আজ দুঃখে দৈন্যে প্রাণে সুখ নেই।"- উক্তিটি দ্বারা আমাদের পল্লিসাহিত্যের বর্তমান দৈন্যদশার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ আমাদের উদাসীনতা ও পারিপার্শ্বিকতার দুরাচারে পল্লিসাহিত্য আজ বিপন্ন।

বাংলা পল্লির প্রত্যেক পরতে পরতে সাহিত্য ছড়িয়ে আছে। অথচ আমাদের সচেতন সাহিত্য সমাজ পল্লির অমূল্য সেসব সাহিত্যের কদর করছে না। নব্য শহরে সাহিত্যের প্রতি তারা বেশি অনুরাগী হয়ে উঠেছে। যারা পল্লির এসব সাহিত্য তৈরি ও চর্চা করত তারাও আজ দুঃখ-দৈন্যে আক্রান্ত। আমাদের মনে সুখের পরশ নেই। আলােচ্য উক্তিটি দ্বারা এটাই নির্দেশিত হয়েছে।

সারকথা : শহুরে সাহিত্যের প্রভাবে এবং দুঃখ-যন্ত্রণায় মানুষ আজ কাতর। তাই মানুষ আজ পল্লিসাহিত্যের প্রতি উদাসীন।


গ. প্রয়ােগ
পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের সঙ্গে উদ্দীপকের কথকের পল্লিসাহিত্যের প্রতি অনুরাগ প্রকাশে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

উদ্দীপকের লেখক পল্লিসাহিত্যে প্রতি ডালােবাসা, মমতা ও অনুরাগ প্রকাশ করেছেন। তাই সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেছেন। গ্রামে গিয়ে এমন এক লােকের সন্ধান পেয়েছেন, যিনি কথায় কথায় বেশ ছন্দ তৈরি করেন। গান, ছন্দ, ছড়া আর পুঁথি তিনি মুখস্থ বলতে পারেন। কিন্তু এই গুণী লােকটি একজন কৃষক। লেখক অনুভব করেছেন যে, গ্রামের এরূপ গুণী মানুষের মূল্যায়নের মাধ্যমে যদি পল্লিসাহিত্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয় তবে বাংলা সাহিত্য আরও অনেক সমৃদ্ধি লাভ করবে।


পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধেও লেখক পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরেছেন। লেখক গভীর মমতায় পল্লিসাহিত্যের প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন। উদ্দীপক এবং 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধ উভয় ক্ষেত্রেই পল্লিসাহিত্যের প্রতি মমত্ববােধ প্রকাশ পেয়েছে। এদিক থেকে বলা যায় যে, 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের সঙ্গে উদ্দীপকের কথকের সাদৃশ্য হলাে পল্লিসাহিত্যের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ।

সারকথা : প্রাবন্ধিক ও উদ্দীপকের লেখক পল্লিসাহিত্যের প্রতি ভালােবাসা প্রকাশ করেছেন এবং সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেছেন।


ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
"উদ্দীপকে 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের সমগ্রভাবের প্রকাশ না ঘটলেও আংশিক ভাব প্রকাশ পেয়েছে।"- মন্তব্যটি যথার্থ।

মানুষের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও কল্পনার সমন্বয়ে পল্লিসাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। জীবন ও কাজের সাথে সংগতি বিধান করে মানুষ প্রতিনিয়ত এ সাহিত্যের চর্চা করে। প্রাণের আবেগের জোয়ারে সৃষ্ট এ সাহিত্য আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক।

উদ্দীপকের লেখক একজন চাকরিজীবী। মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য তিনি গ্রামে গিয়ে এক অসাধারণ লােকের সন্ধান পান। লােকটি ছন্দোবদ্ধ কথা বলতে অভ্যস্ত। অজস্র গান, ছন্দ, ছড়া আর পুঁথি তাঁর মুখস্থ। লেখক তখন ভাবলেন যে, এসব দুর্লভ সাহিত্য যদি সংরক্ষণ করা যায়, তবে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার আরও অনেক সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।


পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধে পল্লিসাহিত্যের বিশেষ রূপরেখা অঙ্কিত হয়েছে। প্রাবন্ধিকের মতে, পল্লির মাঝেই বিখ্যাত মনসুর বয়াতির মতাে অনেক কবি লুকিয়ে আছেন, যারা প্রয়ােজনীয় পরিচর্যার অভাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারছেন না। পল্লিসাহিত্যের অন্তর্গত এ সব সাহিত্য সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস। বিদেশি সাহিত্যের প্রভাবে এর কর্ণধাররা আজ পল্লিসাহিত্যের প্রতি উদাসীন। ফলে বিশাল এই সাহিত্যভাণ্ডার প্রায় বিপন্ন।

উদ্দীপক ও প্রবন্ধে পল্লিসাহিত্যের প্রতি মমতা ও ভালােবাসা প্রকাশ পেয়েছে। আলােচ্য প্রবন্ধে পল্লিসাহিত্য নিয়ে বিস্তৃত আলােচনা করা হয়েছে।


কিন্তু উদ্দীপকের শুধু পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের দিকটি উঠে এসেছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে পল্লিসাহিত্য প্রবন্ধের সমগ্র ভাবের প্রকাশ না ঘটলেও আংশিক ভাবের প্রকাশ ঘটেছে। মন্তব্যটি যথার্থ।

সারকথা : 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধে পল্লিসাহিত্যের বিভিন্ন দিক ও গবেষণার মাধ্যমে সংরক্ষণের কথা আলােচিত হয়েছে। আর উদ্দীপকে শুধু পল্লিসাহিত্য সংরক্ষণের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে, যা 'পল্লিসাহিত্য' প্রবন্ধের সমগ্র ভাব প্রকাশ না করলেও আংশিক ভাব প্রকাশ করে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post