👉উদ্দীপক : ১৯৯৭ সালে সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ১০,০০০ গাড়ি প্রায় ১২৫টি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। দুর্ঘটনার এই হার এশিয়ার দেশগুলাের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং নরওয়ে ও সুইডেনের তুলনায় ১০০ গুণ বেশি। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর শুধ শিশু মারা যায় ৩৪১২ জন। ইনজুরিজনিত সমস্যায় পঙ্গুত্ববরণ করে ১২০০ শিশু। এ হিসেব মতে প্রতিদিন গড়ে ৩.৫ জন শিশু পঙ্গুত্বের শিকার হয়। বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০০০-২০০৪ সাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা ও আহতদের ২৪% লােকের ব্যস ১৫ বছরের নিচে। ৩০% লােকদের বয়স ১৬-৫০ বছরের মধ্যে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০- ৪৪ বছরের কর্মক্ষম জনগােষ্ঠী অধিক দুর্ঘটনার শিকার।
(ক) বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের প্রতিবেদন অনুসারে ২০০১ সালে বাংলাদেশে কয়টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে?
(খ) সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা কর।
(গ) সমাজ জীবনে শিশু ও কর্মক্ষম ব্যক্তির পঙ্গুতুববরণ ও মৃত্যুর অর্থনৈতিক ও মানসিক প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) উপরোক্ত তথ্যের আলোকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপগুলো বিশ্লেষণ করুন।
(ক)-এর উত্তর :
বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের মতে, 2001 সালে বাংলাদেশে 4,091 টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
(খ)-এর উত্তর :
বাংলাদেশের শহরে গাড়ির সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সে হারে দক্ষ চালক তৈরি হয়নি। অদক্ষ ও প্রশিক্ষণবিহীন চালককে দিয়ে গাড়ি চালানাের কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গাড়ি চালানাের জন্য যে সকল আইন ও নিয়ম নীতি রয়েছে তাও অধিকাংশ গাড়ি চালকরা জানেন না। এ কারণে তারা কখনাে কখনাে মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকে।
(গ)-এর উত্তর :
সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব পারিবারিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে খুবই মারাত্মক। নিম্নে সমাজজীবনে শিশু ও কর্মক্ষম ব্যক্তির পঙ্গুত্ব বরণ ও মৃত্যুর অর্থনৈতিক ওমানসিক প্রভাব ব্যাখ্যা করা হলাে :-
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান শিকার হচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দুর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত হওয়ার কারণে এসব পরিবারের সদস্যদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয় এবং আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ পরিবারের শিশুদের শিক্ষা ব্যাহত হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনায় ব্যক্তি শারীরিকভাবে পঙ্গু হলে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, যা তার ব্যক্তি জীবনকে ভারসাম্যহীন করে তােলে। মানসিক ভারসাম্যহীনতা ব্যক্তি জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এ সমস্যা কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় রূপ নেয়। আবার দেখা যায় পঙ্গু ব্যক্তিটিকে ভিক্ষাবৃত্তির মতাে পেশা গ্রহণ করতে। কেউ কেউ জীবন নির্বাহের জন্য অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। চরম ইতানা লাঘবে অনেকে আবার মাদাকসক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনা ওমু পারিবারিক জীবনকেই বিপর্যন্ত করে না, আর্থ-সামাজিক ও মানসিক জীবনকেও দুর্বিষহ করে তােলে।
(ঘ)-এর উত্তর :
উপরিউক্ত তথ্যের আলােকে সড়ক দুর্ঘটনারােধের পদক্ষেপগুলাে নিম্নে দেয়া হলাে :-
⧫ গাড়ির চালককে ট্রাফিক আইন-কানুন ও নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে গাড়ি চালাতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সাইড, সিগন্যাল, গতি মেনে সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে গাড়ি চালককে উৎসাহিত করা।
⧫ বেপরােয়া ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি না চালানাে, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল পরিবহন না করা, অন্য গাড়িকে ওভারটেকিং না করার বিষয়ে চালকদের সচেতন এবং আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করা।
⧫ আধুনিক ও মানসম্মত ড্রাইভিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করা, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ সংস্কার ও পুনঃ নির্মাণ করে সড়ক নিরাপদ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
⧫ গাড়ির ছাদে যাত্রী এবং মালামাল বহন না করা, প্রতিযােগিতা করে গাড়ি না চালানাে, রাস্তায় গাড়ি বের করার পূর্বে যান্ত্রিক ক্রুটি পরীক্ষা করা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
⧫ দূরপাল্লার সড়কের পাশে বাড়ি-ঘর তৈরি এবং হাট-বাজার স্থাপন না করা। তাছাড়া ধান, পাট, মরিচ না শুকাতে দেয়া এবং গরু-ছাগল না বাঁধা।
⧫ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ সংস্থাকে দায়িত্বশীল হওয়া এবং ভুয়া লাইসেন্সধারী যাতে রাস্তায় গাড়ি চালাতে না পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দায়িত্বশীল করা।
⧫ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এ্যালকোহল গ্রহণকারী গাড়ি চালকদের সনাক্ত করা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাহার করা।