👉উদ্দীপক : যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি।
যে মােরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুকভরা গান,
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,-
আপন করিতে কাদিয়া বেড়াই যে মােরে করেছে পর।
ক. মক্কার পথে-প্রান্তরে কাদের প্রস্তর ঘায়ে তিনি আহত হয়েছিলেন?
খ. বৃদ্ধ হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা) মূর্ছিত মুসলিমকে কোন কথাটি বুঝাইয়া দিলেন?
গ. উদ্দীপকে মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের কোন দিকের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "উদ্দীপকে উল্লিখিত দিকটি মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের আংশিক রূপায়ণ মাত্র"- মূল্যায়ন কর।
ক. জ্ঞান :
মক্কার পথে-প্রান্তরে পৌত্তলিকদের প্রস্তর ঘায়ে তিনি আহত হয়েছিলেন।
খ. অনুধাবন :
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) মহানবি (স.)-এর মৃত্যুসংবাদ শুনে বিচলিত মুসলমানকে বুঝিয়ে দিলেন যে, হযরত মুহম্মদ (স.) অন্য সব মানুষের মতাে জীবন-মৃত্যুর অধীন, তিনিও রক্ত-মাংসে গঠিত মানুষ।
মহামতি আবুবকর শেষ পর্যন্ত হযরতর মৃত্ুশয্যার পাশে ছিলেন। তিনি গম্ডীরভাবে প্রিয় নবির মৃত্যুসংবাদ পৌছে দিয়েছিলেন সবার কাছে। তিনি বলেছিলেন যে, হযরত আমাদেরই মতাে রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। তাই তাঁর মৃত্যুও স্বাভাবিক। এ সত্যটি বৃদ্ধ হযরত আবুবকর সিদ্দিক মূর্ছিত মুসলমানদের বুঝিয়ে দিলেন।
সারকথা : মানুষ মরণশীল। হযরত মুহম্মদ (স.) অন্যসব মানুষের মতােই রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ তাই তাঁর মৃত্যুও স্বাভাবিক। হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) একথা বলেছিলেন।
গ. প্রয়ােগ :
মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর গুণাবলি প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলাে প্রেমময়তা, যা উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই পৃথিবীতে প্রেমই একমাত্র শক্তি যার মাধ্যমে চিরশত্রুও মিত্রে পরিণত হয়। মানুষে মানুষে প্রেমের বন্ধনেই নির্মিত হয় একটি সুন্দর সমাজ। মহামানবেরা যুগে যুগে এই প্রেমের বাণীই পৌছে দিয়েছেন মানবসমাজে।
'মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে হযরত মুহম্মদ (স.)-এর মানবীয় গুণাবলির বিস্তৃত পরিচয় প্রকাশিত যার একটি হলাে প্রেমময়তা। তিনি সকলের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন, মানুষের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায় বিনিদ্র রজনী যাপন করেছেন। যারা তাঁকে বারবার আঘাত করেছে, যাদের দ্বারা তিনি বারবার রক্তাক্ত হয়েছেন তাদেরকে কখনাে অভিশাপ দেননি। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তেও তিনি তাদের জন্য আশীর্বাদ করেছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশেও এই প্রেমবােধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যারা প্রকৃত মানবপ্রেমিক তারা নিজ মহত্বে শত্রুকেও আপন করে নেন।
সারকথা : মানবকল্যাণে আত্মনিবেদন ও পরােকপারী মনােভাব মানুষকে মহৎ করে তুলে। উদ্দীপকে মহানবী (স.)-এর মানবপ্রেমের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উচ্চতর দক্ষতা :
"উদ্দীপকটি মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধের আংশিক রূপায়ণ মাত্র।"- মন্তব্যটি সর্বাংশে সত্য।
হযরত মুহম্মদ (স.) ছিলেন ইসলামের সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ নবি। তাঁর চরিত্রে প্রেম, ক্ষমা, মহত্ত, মহানুভবতার মতাে অজস্র গুণের সমাবেশ ঘটেছিল। শত্রুকেও তিনি টেনে নিয়েছিলেন। তিনি মানবপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
উদ্দীপকে মহানবি হযরত মুহম্মদ (স.)-এর চরিত্রের একটি দিকের পরিচয় প্রকাশমান। মহৎ মানবেরা প্রেমের বাধনে চরম শত্রুকেও জড়িয়ে রাখেন। যে বুকেতে আঘাত করে, বুকে আগলে তাকে আপন করে নেন। মহানবি হযরত মুহম্মদ (স.) এভাবে অনেক শত্রুকে আপন করে নিয়েছিলেন। যারা তাঁর পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তিনি তাদের পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছিলেন।
হযরত মুহম্মদ (স.) ছিলেন সর্বগুণের আধার। ক্ষমা, দয়া, পরােপকারিতা, প্রেম প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যে তাঁর চরিত্র ছিল মহিমান্বিত। উদ্দীপকে তাঁর প্রেমময়তার প্রকাশ ঘটেছে, যা আলােচ্য প্রবন্ধের আংশিক রূপ মাত্র।
সারকথা : 'মানুষ মুহম্মদ (স.)' প্রবন্ধে মহানবি হযরত মুহম্মদ (স.)-এর 'মহৎ গুণাবলি ও তাঁর কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এসব গুণের অন্যতম একটি মানবপ্রেমের দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। তাছাড়া ক্ষমা, উদারতা, ন্যায়বিচার, ধৈর্য ইত্যাদি বিষয় সেখানে অনুপস্থিত।