👉নিম্নলিখিত 'প্রবন্ধ-রচনা' লিখতে প্রদত্ত বিন্যাসটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে আপনাকে প্রদত্ত জায়গাতে সংশ্লিষ্ট 'প্রবন্ধ-রচনার' নাম লিখতে হবে।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা।
অথবা, বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন।
অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার গুরত্ব।
অথবা, দৈনন্দিন/প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান।
অথবা, মানব কল্যাণে বিজ্ঞান।
অথবা, আধুনিক জীবন বিজ্ঞান নির্ভর।
অথবা, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে বিজ্ঞান।
অথবা, বিজ্ঞান ও প্রতিদিনের জীবন।
ভৃমিকা : আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান মানব সভ্যতার এক বিশিষ্ট অবদান। মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। অক্সিজেন ছাড়া যেমন প্রাণীকুলের জীবন ধারণের কথা কল্পনা করা যায় না, তেমনি বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতাকেও কল্পনা করা যায় না। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে এসেছে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি, এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। আদিম যুগ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানব সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে, তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের দান৷
The triumph of science Or, science and modern life. |
বিজ্ঞানের গুরত্ব : বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। মানব সমাজের যে দিকেই দৃষ্টিপাত করা যায়, শুধু বিজ্ঞানের মহিমাই স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিজ্ঞানের বলে মানুষ জল-স্থল, অন্তরীক্ষ জয় করেছে; মানুষের সংকট নিরসন ও অসংখ্য সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের বহু অভাবনীয় কৌশল আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞান আজ মৃত্যুকে জয় করার সংকল্প করছে। বিজ্ঞানের একটি বিশিষ্ট আবিষ্কার বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ মানব সভ্যতাকে অত্যধিক দ্রুতগতিতে এগিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞান এক দেশের খবর অন্য দেশে নিমিষের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে। দূরত্ব কমিয়ে সারা পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। কাগজ, মুদ্রণযন্ত্র ইত্যাদি আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষাক্ষেত্রে এনে দিয়েছে ব্যাপক প্রসারতা। পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান এনেছে গতিময়তা। মূলত বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রার সুখ-সমৃদ্ধি বর্ধন। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান : চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে আজ মানুষ অকাল মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। কলেরা, বসন্ত, যক্ষ্মা ইত্যাদি ব্যাধিতে মানুষকে আর অসময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় না। উন্নতমানের ওষুধ, অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা এক্সরে, আলট্রা ভায়োলেট- রে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসেছে এক আমূল পরিবর্তন।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান : আধুনিক বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রেও অশেষ উন্নতি সাধন করেছে। প্রাচীন ভোতা লাঙ্গলের পরিবর্তে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের কলের লাঙ্গল ও ট্রাক্টর। পচা আবর্জনা ও গোবরের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার। প্রকৃতির দয়ার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে উন্নতমানের বীজ।
খাদ্যে বিজ্ঞান : মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য প্রধান। খাদ্য ব্যতিরেকে মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব। আজকের পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত মানুষ বাড়ছে। আর সঙ্গত কারণেই প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত খাদ্যের। এ মৌলিক দিকটা বিবেচনা করে বিজ্ঞান মানুষের খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এবং বহুলাংশে সার্থক হয়েছে। বিজ্ঞানের প্রচেষ্টায় আজ ধান, গমসহ মানুষের সকল প্রকার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানের অবদানের ফলে ইতোমধ্যেই গরু, হাঁস মুরগি, মাছসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
যােগাযােগক্ষেত্রে বিজ্ঞান : আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পুরোটাই বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর ও দ্রুততম করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করছে নতুন নতুন যানবাহন। দ্রুততম রেলগাড়ি, আধুনিক কনকর্ড বিমান, মাটির তলায় ধাবমান টিউব রেল সবই বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞানের অবদানেই আজ আমরা এরোপ্লেনে চড়ে শূন্যাকাশে শত শত মাইল পাড়ি দিচ্ছি যা ছিল একসময় স্বপ্নের ব্যাপার।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশ। রেডিও, টিভি, ফ্রিজ, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি ও বৈদ্যুতিক হিটার ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত সহজতর ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে। অফিস-আদালতে নিত্য ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কত রকম প্রয়োজন যে মেটাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।
বৈদ্যতিক পাখা : বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর অবদান বৈদ্যুতিক পাখা। এটি আমাদেরকে গ্রীষ্মের উষ্ণতায় এনে দেয় প্রশান্তি। আধুনিক জীবনে বাসগৃহ, অফিস আদালত প্রভৃতিকে আমাদের জন্য আরামদায়ক করে তোলার ক্ষেত্রে এর শীতল হাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটি ছাড়া গ্রীষ্মের দুঃসহ গরমে আমাদের এক মুহূর্ত কাটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বৈদ্যতিক বাতি : দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বাসগৃহ, অফিস আদালত, কল কারখানা, নগর জীবন এমনকি পল্লী জনপদকেও আলোকিত রাখার জন্য আমরা যে জিনিসটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি তা হচ্ছে বৈদ্যুতিক বাতি। আর এটি হচ্ছে বিজ্ঞানের অসামান্য অবদান।
বেতার ও টেলিভিশন : বেতার ও টেলিভিশন বিজ্ঞানের দুটি বিস্ময়কর অবদান। এগুলোর সাহায্যে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত ঘটনাবলির খবরাখবর জানতে পারি। তাছাড়া এগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি নাটক, গান ইত্যাদি প্রচার করা হয় যা আমাদের জ্ঞানের বিকাশ ও চিত্তবিনোদনে সহায়তা করে।
কম্পিউটার : বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর অবদান কম্পিউটার যা মানব মস্তিষ্কের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এটি রোগীর রোগ নির্ণয়, ব্যবসায়ের লাভ লোকসানের হিসাব, যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, প্লেন ও ট্রেনের আসন সংরক্ষণ এবং সম্প্রতি বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।। এটি দাবা ও ভিডিও গেম খেলতে পারে। আজকাল আমরা অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা, টেলিযোগাযোগ, রিসার্স এন্ড এ্যানালাইসিস, পোস্টাল সার্ভিস, প্রকাশনা ইত্যাদি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহার করছি। এক কথায় কম্পিউটার হচ্ছে— আধুনিক সভ্যতাকে অত্যাধুনিকে রূপান্তরিত করার একটি বৈজ্ঞানিক কৌশল।
অপকারিতা : বিজ্ঞান একদিকে যেমন মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করে আসছে, অন্যদিকে তেমনি এনেছে বিভীষিকা। এটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, ইত্যাদি মারাত্মক মারণাস্ত্র আবিষ্কারের ফলে মানব সভ্যতা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিনামাইট, বোমারু বিমান, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার বোমা বর্ষণের পর জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি, শহরের ধ্বংসযজ্ঞ তারই বাস্তব প্রমাণ।
উপসংহার : মানব সভ্যতাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিজ্ঞান। সর্বোপরি, বিজ্ঞান আমাদের সুখ-সমৃদ্ধি আনয়ন করেছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে গতিময়। কিন্তু মানুষ যদি বিজ্ঞানের কল্যাণকর শক্তিকে অপব্যবহার করে তবে দোষ বিজ্ঞানের নয়, দোষ মানুষের। মানুষ যদি বিজ্ঞানের শক্তিকে অপব্যবহার না করে শুভ বুদ্ধির দ্বারা চালিত হয় এবং বিজ্ঞানকে সভ্যতার বিকাশে কাজে লাগায় তবে বিজ্ঞান অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদই হবে।
⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸⫷⫸