জাহান্নামীদের আফসোস । Woe to those in Hell ।।

জাহান্নামের ফেরেশতারা জাহান্নামীদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলবে, তোমাদের আজ এ পরিণতি কেন? তোমাদের কাছে কি কোনো সতর্ককারী আসেনি? আল্লাহ তায়ালা সূরা মূলকের ৮ নাম্বার আয়াতে বলেন - كُلَّمَا أُلْقِيَ فِيهَا فَوْجٌ سَأَلَهُمْ خَزَنَتُهَا أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَذِيرٌ - "যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখন তার প্রহরীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি’?"

এমন এক ভয়ংকর জায়গায় তোমাদের শেষ পরিণতি হলো যেখানে কোন দয়া প্রদর্শন করা হয় না, এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার সময়ও শেষ। তোমাদের কী হলো? কেন তোমাদের আজ এ পরিণতি? কিভাবে এমনটি ঘটতে পারলো? তোমাদের কাছে কি কোনো সাবধানকারী আসেনি? ঐ সতর্ককারীর কথা যদি তোমার শুনতে তাহলে আজকের এই ভয়ংকর পরিণতি তোমাদের হতো না। জবাবে জাহান্নামীরা বলবে - قَالُوا۟ بَلَىٰ قَدْ جَآءَنَا نَذِيرٌ فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ ٱللَّهُ مِن شَىْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِى ضَلَٰلٍ كَبِيرٍ - "তারা বলবে, ‘হ্যাঁ, আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল। তখন আমরা (তাদেরকে) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছ’।"

জাহান্নামীদের আফসোস । Woe to those in Hell ।।

শুধু بَلَىٰ - ‘হ্যাঁ, এসেছিলো' বললেই তাদের জবাব যথেষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু তারা প্রচন্ত অনুতাপ আর অনুশোচনায় জর্জরিত হওয়ার কারণে এভাবে বিস্তারিত জবাব দিবে। আমরা সুযোগ হারিয়েছি। সতর্ককারী এসেছিলো, আমাদেরকে জাহান্নাম সম্বন্ধে সাবধান করেছিল। কিন্তু আমরা তার আহ্বানকে সম্মান করার পরিবর্তে, তার মেসেজ অনুযায়ী নিজের জীবন গঠন করার পরিবর্তে তাকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছিলাম। এবং আমরা বলেছিলাম ‘আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি।' যখন সতর্ককারী নবী রাসূলরা আমাদের বলেছিলো, এই বাণী তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে এসেছে, একে গ্রহণ করে নাও। আমরা তাদের বলেছিলাম, আল্লাহ কিছুই নাজিল করেন নি। আমরা তাদের আরো বলেছিলাম—"তোমরা তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছ।"

কিন্তু এখন দোজখের অধিবাসীরা নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছে নবীরা সঠিক ছিল আর তারা ভুলের উপর ছিল।

এই দুনিয়াতে তোমাদের যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। চিন্তা করো, এই বিশ্বজগতের দিকে তাকিয়ে দেখো। এই বিশ্বজগত অন্য কিছু বলার আগে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছে এই জগতের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। কোনো বাচ্চার প্রতি তার মায়ের ভালোবাসাই ঐ বাচ্চার নিকট তার মা হওয়ার সবচেয়ে বড় প্রমান। মাকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হয় না যে আমিই তোমার মা। বাচ্চা তার ভালোবাসা থেকেই বুঝতে পারে ইনি আমার মা। কারণ কারো পক্ষেই মায়ের মত ভালোবাসা সম্ভব নয়।

আমাদের প্রতি আমাদের রবের যে অপরিসীম ভালোবাসা রয়েছে এবং এই পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তিনি যে চরম যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে সবকিছুর যোগান দিচ্ছেন তা কি প্রমান করে না যে তিনি আমাদের রব? গাছ-পালা, নদী-নালা, পাহাড় পর্বত সবকিছুই তিনি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি হলেন আর রহমান।

তারপর এই জাহান্নামীরা বলবে— وَقَالُوا۟ لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِىٓ أَصْحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ - "তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।"

অনেক মানুষ নিজেদের বিশাল দাৰ্শনিক মনে করেন, গবেষক মনে করেন। কিন্তু তাদের চিন্তার পরিধি খুবই সীমিত। এই বিশ্ব জগৎ অধ্যয়ন করলে সবার আগে যে মৌলিক প্রশ্নটি মানুষের মাথায় আসে তারা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কোন চেষ্টা করে না। তারা প্রকৃতি অধ্যয়ন করে সবকিছু বোঝার চেষ্টা করে— কিভাবে পাখি উড়ে, মাছ কিভাবে সাঁতার কাটে, তারপর এর থেকে বিমান আবিষ্কার করে, ডুবো জাহাজ আবিষ্কার করে। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর কখনো খোঁজে না— কিভাবে মানুষ হিসেবে এই দুনিয়ায় বসবাস করতে হয়।

আপনি আকাশে উড়তে পারেন, সমুদ্রের নিচে সাঁতার কাটতে পারেন কিন্তু আপনার সৃষ্টিকর্তাকে চিনেন না। আপনি সাগরের নিচের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিস দেখতে পারেন, আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের বিভিন্ন জিনিস দেখতে পারেন কিন্তু আপনি জানেন না কে এই সবকিছু সৃষ্টি করলো!! এই প্রশ্নটি কি আপনার মাথায় কখনো আসেনি? প্রথম যে প্রশ্নটি মাথায় আসার কথা তাহলো কে সেই মহান সত্তা যিনি এই অত্যাশ্চর্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। কেন আমি এখানে? আমি কোথায় যাচ্ছি? এই প্রশ্ন কি আপনার মাথায় একবারের জন্যেও আসেনি?

কিন্তু যখন সময় শেষ হয়ে যাবে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট ফেরত যাবে তখন তারা বলবে— لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِىٓ أَصْحَٰبِ ٱلسَّعِيرِ - "যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম তাহলে আমরা জাহান্নামবাসী হতাম না।"

শায়েখ আকরাম নদভী —Surah Mulk part 3 থেকে। — DeepDeen tv
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post