যদি ফ্রিল্যান্সার বেড়ে যায় তাহলে কি কাজের রেইট কমে যাবে?

উত্তর : একটা কোম্পনী যদি অনলাইনে আসে তাহলে কয়েক হাজার এমপ্লয়মেন্ট তৈরী হয়। এই ভাবে পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার হাজার কোম্পানী অনলাইনে কনভার্ট হচ্ছে এবং প্রতিদিন লাখ লাখ জব পোষ্ট তৈরী হচ্ছে।

কিন্তু সেই হারে কাজ জানা ফ্রিল্যান্সার তৈরী হচ্ছে না। কারণ মার্কেটপ্লেসে একটা একাউন্ট করলেই তাকে ফ্রিল্যান্সার বলে না। যে ৬ মাস ধরে কষ্ট করে এডভান্সড লেভেলের কাজ শিখেছে তাকেই ফ্রিল্যান্সার বলে। কিন্তু ধৈর্য ধরে এডভান্সড লেভেলের কাজ শিখে এই রকম মানুষ খুবই কম। মানুষ বেশী শিখতে চায় না। ব্রেইনকে কষ্ট দিতে চায়না। কত কম শিখে কত বেশী ইনকাম করা যায় সেই চেষ্টাই করে সবসময়। এই কারণে কাজ জানা ফ্রিল্যান্সার খুবই খুবই কম।

যদি ফ্রিল্যান্সার বেড়ে যায় তাহলে কি কাজের রেইট কমে যাবে?

আচ্ছা যদি বাংলাদেশের সকল মানুষ খুব ভালভাবে কাজ শিখে তখন কি হবে? প্রথমত এটা সম্ভব নয়। কারণ ১০০ জন মানুষ যদি কাজ শিখার উদ্যোগ নেয় তবে ৯০ জনই ২য় মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারে না। ৬ মাস পর্যন্ত টিকে থাকবে বড়জোর ৫ জন এবং তারাই সফল ফ্রিল্যান্সার হবে। তাই বাংলাদেশের সকল মানুষ যদি পরিপূর্ণ উৎসাহ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে তবে মাত্র কয়েক লাখ শেষ রাউন্ড পর্যন্ত যেতে পারবে।

আচ্ছা যদি অলৌকিকভবে বাংলাদেশের সকল মানুষ এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার হয়ে যায় তখন কি হবে? তখন কি কাজ কমে যাবে? কম্পিটিশন বেড়ে যাবে? কাজের রেইট কমে যাবে? উত্তর হচ্ছে: “না”।

কারণ পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি দেশ ফ্রিল্যান্সিং করে যেমন: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্থান, ফিলিপাইন এবং নাইজেরিয়া। আর বাকী প্রায় ২০০ টা দেশে কাজ দেয়। যার ফলে এখানে চাকরী প্রার্থীর চাইতে চাকরী দাতা অর্থাৎ জব পোষ্ট অনেক অনেক গুণ বেশী। যার ফলে বাংলাদেশের সকল মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করলেও তা ফ্রিল্যান্সিং জব মার্কেটের চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ঠ না।

গত ২ বছর আগে আমাদের স্টূডেন্টদের টার্গেট দেয়া হত ২য় মাসে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা ইনকাম কিন্তু এখন আমাদের স্টূডেন্টরা কোর্সের ২য় মাস ২০ হাজার প্লাস ইনকাম করতে পারে। আগে যেই কাজের ভ্যালু ছিল ১০ ডলার এখন সেই কাজের ভ্যালু ৫০ ডলার। কারণ যেই হারে চাকরী বাড়ছে সেই হারে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বাড়ছে না। তাই বায়াররা বেতন বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে এবং বেশী বেতন দিয়েও ভাল ফ্রিল্যান্সার পাচ্ছে না কারণ ভাল কাজ জানা ফ্রিল্যান্সার খুুবই কম।

আরেকটি কথা হল বায়াররা কম টাকা দিয়ে কাজ করাতে চায় না। তারা কোয়ালিটি চায়। আর কোয়ালিটি এনসিউর করার জন্য তারা বেশী বেতন দিতে রাজী থাকে।

সুতরাং আপনি যদি ভালভাবে কাজ শিখেন তবে আপনার ক্যারিয়ার সিকিউরড।

ফ্রিল্যান্সিংদের পরিচয় সঙ্কট ও সমাধান :
আমাদের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কারণে সাধারণ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং মানেই বুঝে: পার্ট টাইম ইনকাম, ডাটা এন্ট্রি, ক্লিক করে আয় ইত্যাদি। আমাদের মিডিয়াগুলো পরিপূর্ণভাবে না জানার কারণে তারা ফ্রিল্যান্সিং কে জাষ্ট এক্সট্রা ইনকামের একটা ওয়ে হিসেবে প্রচার করে।

তাই যখনই কেউ শুনে যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করেন তখন ভেবে নেয় যে আপনি ডাটা এন্ট্রি বা এই রকম টুক টাক কিছু কাজ করে কোন রকমে কষ্টে বিষ্টে মাসে হাজার ১০/২০ হাজার টাকা ইনকাম করেন।

কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং হল একটা পরিপূর্ণ প্রফেশন। লাইফটাইম প্রফেশন। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ল’ইয়ার, সরকারী চাকরী ইত্যাদির মত একটি পরিপূর্ণ পেশা। একজন ফ্রিল্যান্সার অন্য পেশা বা চাকরীর চাইতে অনেক অনেক বেশী ইনকাম করতে পারে। একজন ভাল কাজ জানা ফ্রিল্যান্সার অনায়াসেই মাসে ৫/১০ লাখ টাকা ইনকাম করে। কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতি নাই। বিয়ের বাজারে চৌধুরী সাহেব সহজে রাজী হতে চায় না।

সমাধান কি?
প্রথমেই নিজের পরিচয় সঠিকভাবে দিন। মনে করুন ফ্রিল্যান্সিং নামে দুনিয়াতে কিছুই নেই। আপনি আসলে ফ্রিল্যান্সার না। আপনি একজন আই.টি প্রফেশনাল, অথবা গ্রাফিক ডিজাইনার, অথবা ওয়েব ডেভেলপার। আপনি কাজটি দেশের কোন কোম্পানীতে না করে আমেরিকার কোন কোম্পানীতে করছেন।

খুব সিম্পলি নিজের পরিচয় দিন এইভাবে :
‘‘আমি আমেরিকান বা অমুক দেশের একটা কোম্পানীতে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে জব করি। অনলাইনে ঘরে বসে কাজ করি এবং তারা আমাকে প্রতি মাসে আমার ব্যাংক একাউন্টে সেলারী ট্রান্সফার করে।”

ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সাথে এখন সবাই পরিচিত। যার ফলে প্রশ্নকর্তা অনলাইন সম্পর্কে একদম অভিজ্ঞ না হলেও এটা বুঝবে যে অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানীতে কাজ করা যায়।

এইভাবে সামাজিকভাবে আপনার পরিচয় বললে মানুষ খুব সহজে বুঝতে পারবে যে :
১. আপনি যেহেতু বিদেশী কোম্পানীতে কাজ করেন তাই আপনি অবশ্যই অনেক বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন।

২. বিদেশী কোম্পানীতে ভাল সেলারী। স্বাভাবিকভাবে আপনার ইনকাম দেশের কোম্পানীতে চাকরী করা ছেলেদের চেয়ে বেশী।

৩. আপনি বাংলাদেশের আরো দশটা ছেলের চাইতে অনেক বেশী চৌকশ ও মেধাবী।

৪. আপনি আপনার এলাকার একজন আইকনিক ফিগারে পরিণত হতে পারবেন এবং সবাই আপনার এক্সজাম্পল দিবে।

সত্যিকার অর্থেই আমরা ফ্রিল্যান্সিং করি না। ফ্রিল্যান্সিং হল ইচ্ছা হলে করলাম ইচ্ছা হলে করলাম না। তার মানে খুব সিরিয়াস না। কিন্তু আমরা খুবই সিরিয়াস।

কিন্তু আমরা এটাকে পরিপূর্ণ পেশা হিসেবে বিদেশী কোন কোম্পীতে স্থায়ী চাকরী করি।

এমনকি বিদেশী কোন বায়ারকে যদি আপনি পরিচয় দেন যে আপনি ‘‘ফ্রিল্যান্সার” তবে সে আপনার উপর স্বাভাবিকভাবেই আস্থা রাখতে পারবে না। কারণ সে মনে করবে আপনি তার কাজটি খুব গুরুত্বের সাথে করবেন না।

সুতারং নিজেকে পরিচয় দিন আমি ডিজিটাল মার্কেটোর বা গ্রাফিক ডিজাইনার বা ওয়েব ডেভেলপার বা অন্যান্য। এবং বলুন যে আপনি বিদেশী কোম্পানীতে চাকরী করেন। এটা ১০০% সত্য। ফাইভার, আপওয়ার্ক, আমেরিকা বা ইউরোপের বড় বড় কোম্পনী সবাই বিদেশী কোম্পানী।

সুতরাং এতদিন আপনি যদি নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন এটা ভুল ছিল। এখন থেকে সঠিকভাবে নিজের পরিচয় ‍দিন। চৌধুরী সাহেবরা আপনার পিছনে লাইন ধরবে।

লেখক: মো: জামাল উদ্দিন
সি.ই.ও
আউটসোর্সিং ইন্সটিটিউট
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post